লিবিয়া ট্র্যাডেডি: টাকা দিতে সময় চেয়েছিলেন সুজনের বাবা

লিবিয়ায় মানব পাচারকারীদের গুলিতে নিহত সুজন মৃধার (২০) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। নিহতের পরিবারের স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। সন্তানের মরদেহ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আকুতি জানিয়েছেন নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী।
জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ পরিবারের অভাব মেটাতে এইচএসির শিক্ষার্থী সুজন মৃধা লিবিয়া পাড়ি জমান। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গোহালা ইউনিয়নের বামনডাঙ্গা গ্রামের কৃষক কাবুল মৃধার ছেলে সুজন মৃধা। সুজনের বাবা একই ইউনিয়নের যাত্রাবাড়ী গ্রামের রব মোড়লের মাধ্যমে ছেলেকে লিবিয়া পাঠান। এ জন্য দালালকে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেন।
স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে সুদে এবং কৃষি জমি বিক্রি ও বন্ধক রেখে টাকা জোগাড় করেন তিনি। পরে তা তুলে দেন দালালের হাতে। ৩৫ হাজার টাকা মাসিক বেতন দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তাকে কোন কাজ দেয়নি দালাল চক্র। বরং মেরে ফেলার ১৭ দিন আগে সুজনকে ওই দেশে মানব পাচারকারী চক্রের হাতে তুলে দেয়।
২৬ মে মানব পাচারকারীরা সুজনের কাছে আরো ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ভয়েস কল পাঠায় সুজনের পরিবারের কাছে। ওই ভয়েস কলে সুজনকে মারপিট করার ভয়েস পাঠান দালালরা। তখন সুজনের বাবা তাদের কাছে ১ জুন পর্যন্ত সময় চান। কিন্তু তার আগেই ওরা সুজনকে গুলি করে হত্যা করে।
ওই দেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশি দালালের মোবাইল ফোন থেকে এই ভয়েস কল পাঠানো হয় এবং সোমালিয়ায় আহমেদ মোহাম্মদ আদম সালামের ব্যাংক হিসেবে মুক্তিপণের টাকা পাঠাতে বলা হয়।
নিহত সুজনের মা চায়না বেগম (৪৫) কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে আমার বুকে ফিরায় দেও। আমার ছেলেকে দালালরা নিয়ে গিয়ে ১৭ দিন কোন খাবার দেয়নি। মারপিট করেছে। পরে মুক্তিপণ দাবি করে গুলি করে হত্যা করেছে। আমি আমার সন্তানের মরদেহ চাই। আর ঘটনার সাথে জড়িত দালালদের ফাঁসি চাই। যাতে তারা আর কোন মায়ের কোল খালি করতে না পারে।
একই দাবি জানিয়ে ওই গ্রামের জয়নাল সরদার (৬৫), লিটন মৃধা (৪৫), আকিজুল ইসলাম বাবুল (৬৫) বলেছেন, এই দালাল চক্রের হাতে গোহালা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের আরো বেশ কিছু যুবক লিবিয়ায় বন্দি আছে। আমরা তাদেরকে উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে দালালদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি।
অপরদিকে, একই উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের সুন্দরদী গ্রামের মো. কালাম শেখের ছেলে ওমর শেখ (২২) গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লিবিয়ার ত্রিপলি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। কাঠুরিয়া বাবা পরিবারে একটু স্বচ্ছলতার জন্য ছেলেকে ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা দিয়ে একই গ্রামের দালাল লিয়াকত মোল্লার মাধ্যমে ছেলেকে লিবিয়া পাঠান। আহত ওমর শেখের পিতা মো.; কালাম শেখ ও মা শাহিদা বেগম তার আহত ছেলেকে ফেরত চেয়েছেন। একই সাথে তারা মানব পাচারকারী দালাল চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা জানান, আমরা বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। বিষয়টি খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইউএনও-কে পাঠানো হয়েছে। আমরা দালাল চক্র ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছি।
এ কাজে তিনি সবার সহযোগিতাও কামনা করেন।
SomoyTv